কোভিড-১৯ ভাইরাসে ক্ষণে ক্ষণে রূপ পরিবর্তন করায় এবং বিশ্বব্যাপী টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা বিরাজ করায়, বিশ্বে মহামারী পরিস্থিতি নতুন করে গুরুতর আকার ধারণ করেছে। গোটা বিশ্বে নতুন করে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা টানা চার সপ্তাহ ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মহাপরিচালক তেদ্রোস আদ্হানম গতকাল (সোমবার) নিয়মিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। একই দিনে চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ কর্পোরেশন ও সাইনোভ্যাক কোম্পানি গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুসারে, সাইনোফার্ম ও সাইনোভ্যাক চলতি মাস থেকে কোভ্যাক্সের আওতায় টিকা সরবরাহ করবে। এতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কোভিড-১৯ প্রতিরোধের সক্ষমতা বাড়বে বলে আশা করা যায়।
তেদ্রোস আদ্হানম বলেন, এ পর্যন্ত ১০৪টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে কোভিড-১৯ ভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্ট দেখা গেছে। এ অবস্থায় বিশ্বে নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। দশ সপ্তাহ ধরে নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমার পর, বিগত চার সপ্তাহে নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মহাপরিচালক টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভারসাম্যহীনতা সমালোচনা করেন। তিনি উন্নত দেশগুলোকে সক্রিয়ভঅবে কোভ্যাক্স পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করার আহ্বান জানান।
তিনি, বিশেষ করে, ফাইজার ও মোডারনা কোম্পানিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে টিকা শেয়ার করার অনুরোধ জানান।
একই দিনে কোভ্যাক্স পরিকল্পনার অন্যতম উদ্যোক্তা গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ কর্পোরেশন ও সাইনোভ্যাক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দেয়। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী অক্টোবর পর্যন্ত চীনের দু’টি কোম্পানি কোভ্যাক্স পরিকল্পনার জন্য ১১ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করবে। সবমিলিয়ে এই দুই চীনা কাম্পানি কোভ্যাক্সের আওতায় টিকা সরবরাহ করবে ৩৮ কোটি ডোজ।
গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সিইও সেথ বার্কলে এদিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি চুক্তি স্বাক্ষরকে স্বাগত জানাই। এর মাধ্যমে কোভ্যাক্স পরিকল্পনায় স্বাক্ষরকারী দেশগুলো সময়মতো টিকা পাবে।’ হু’র প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য শোয়ামিনাথন এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, চীনা টিকা নিরাপদ ও কার্যকর। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর টিকার অভাব দূর করতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, চীনা টিকার সরবরাহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
জেনিভায় জাতিসংঘে চীনা প্রতিনিধিদলের একজন কর্মকর্তা বলেন, চীনের দু’টি প্রতিষ্ঠানের কোভ্যাক্স পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া অর্থ হলো, চীন বাস্তব ব্যবস্থা নিয়ে ‘গ্লোবাল পাবলিক পণ্য’ হিসেবে টিকাকে গণ্য করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে আরেকটি পদক্ষেপ নিল। চীন সরকার বরাবরই চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোভ্যাক্স পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া এবং উন্নয়শীল দেশগুলোকে টিকা-সহায়তা দিতে উত্পাহ ও সমর্থন দিয়ে আসছে। বর্তমানে চীনে বেশ কয়েকটি স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত টিকা রাষ্ট্রীয়ভাবে জরুরি ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে এবং অনেক টিকার ক্লিনিকাল পরীক্ষা চলছে। এ ছাড়াও, চীনা টিকা উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিবাচকভাবে কোভ্যাক্স পরিকল্পনায় অংশ নিতে চায়। আরো বেশি চীনা কোভিড-১৯ টিকা হু’র জরুরি ব্যবহারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে বলে চীন আশা করে। চীন বিশ্বের মহামারী প্রতিরোধে আরও বেশি আবদান রাখতে ইচ্ছুক। (ছাই/আলিম/ওয়াং হাইমান)